Sipahi Juddher Itihas By Ahmed Sofa

সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস – আহমদ ছফা (Sipahi Juddher Itihas By Ahmed Sofa)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

এক
বিদ্রোহের কারণ-বীজ

১৮৫৭ সালে সমগ্র হিন্দুস্থানের সেপাইরা বিদেশি ব্িটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে
মেতে উঠেছিল। এর কারণ কি?

এই সেপাইদের তপ্ত রক্ত বিসর্জনেই তো কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত
কোম্পানির রাজত্ব বিস্তৃত হয়েছে । এই সেপাইরাই তো ১৭৫৭ সালের পলাশীর
যুদ্ধের পর থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করে, আসমুদ্র হিমাচলব্যাপী বিরাট
ভূখণ্ডের অধীশ্বর করেছে বেনিয়া ব্রিটিশ কোম্পানিকে । হঠাৎ করে তারা এমন করে
দাবানলের মত ক্ষেপে উঠল কেন? কোন সে কারণ, যা ইংরেজভক্ত সেপাইদেরকে
এমন ব্যাপক প্রচণ্ড বিদ্রোহে উদ্দীপিত করেছিল।

একবাক্যে সকলেই বলবেন, চর্বি মাখানো টোটার প্রবর্তনই বিদ্রোহের সাক্ষাৎ
এবং প্রত্যক্ষ কারণ। তা তো বটেই । কিন্তু এত বড় একটি বিদ্রোহ যা দমন করতে
ইংরেজের মত একটি বিরাট শক্তিকেও এত হিমশিম খেতে হয়েছে, শুধুমাত্র টোটার
মত সামান্য একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে অমন বিরাট একটি বিদ্রোহ তো সংঘটিত
হওয়ার কথা নয়।

এই বিদ্রোহের পেছনে সংগুপ্ত ছিল আরো অনেক কারণ । সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে
গোপনে গোপনে শক্তি সঞ্চয় করে আসছিল । অবশেষে অবস্থা এমন হয়ে দীড়াল যে,
সেপাইরা কোম্পানি রাজের উপর বিশ্বাসের রেশটুকুও হারাতে বাধ্য হল। তারা
নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করতে লাগল । এতদিন ধরে বৃথাই আমরা রক্ত ঢেলেছি,
বৃথাই ইংরেজ রাজ্য বিস্তারের জন্য মরণপণ সংগ্রাম করেছি। বিনিময়ে আমাদের কি
দিয়েছে ইংরেজ? তারা আমাদের দেশের দেশীয় রাজ্যগুলো একের পর এক গ্রাস
করে চলেছে। রাজন্যবর্গের সম্মান ধরে টান দিয়েছে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার
সীমা নেই। চৌকিদারির ট্যাক্স চার পচ গুণ বৃদ্ধি করেছে । আগে বাদশাহি আমলে
খাজনার দাবি যেখানে ছিল দু শ’ টাকা, ইংরেজ আমলে তা তিন শ’ করা হয়েছে।
চার শ’ টাকা খাজনার স্থলে পীচ শ’ ধার্য করা হয়েছে। তারপরেও তো কোম্পানি
বাহাদুরের খাই মেটে না। তারা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কাজের তালাশে
গমনকারী লোকদের ওপর মাথাপিছু ছ’পয়সা করে কর ধার্য করল। জেলার সীমানা
অতিক্রম করার সময় প্রতিটি গরুর গাড়ি পিছু চার থেকে ছ’আনা কর দিতে হত
ব্যবসায়ীদের । পুরনো সন্তান্ত শ্রেণীর লোকদের আয় একেবারে কমে এল । এতেই

লেখক সম্পর্কে

আহমদ ছফা
জন্ম: ১৯৪৩ সাল
গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রী বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । গল্প. উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ।

সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ । বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি । একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের
স্থৃতিবিজড়িত কিয়োঙ্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top