একটু চোখ বুলিয়ে নিন
অপূর্ব বিচার
সে বহু বহু জমানা আগের কথা । বাদশাহ এবং পয়গন্র হযরত দাউদ (আ.)-এর জমানা । বাদশাহ্র প্রাসাদে বেশুমার লোক কাজ করে। বাদশাহর প্রাসাদে কাজ তো থাকেই । এক সীঝে শাহিমহলে নওকরের দল সারি বেঁধে বসে আছে। সারাদিন তারা কাজ করেছে। এখন তাদের খাওয়ার সময়। সকলে অপেক্ষা করছে অধীর আগ্রহে খানার জন্য। শাহি খেদমতগার এসে একেকজনের পাতে একেকটা সিদ্ধ আণ্তা পরিবেশন করে গেল । নওকরদের একজনের নাম রায়হান । সকালবেলা সে পেটের অসুখের জন্য কিছুই খেতে পারেনি। এখন পেটের নাড়িভুঁড়ি ভুখে চো চো করছে। আণ্তাটা হাতে নিয়ে সে টপ করে খেয়ে ফেলল। লোকগুলো হা করে চেয়ে রইল । নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল-_ রায়হান ভারি পেটুক।
অবশেষে একসময় রুটি এল। সকলে আত্তা দিয়ে রুটি খেতে শুরু করে দিল। কিন্তু রায়হান পড়ে গেল ভয়ানক শরমে। সে এদিক-ওদিক তাকায় কেবল। হঠাৎ পাশের লোকটির দিকে তার নজর গেল। সে তার আগ্তাটা এখনো খায়নি । সত্যিই সিদ্ধ ডিমটা তার পাতে এখনো পড়ে আছে। তার জিত বেয়ে পানি এল। লোকটিকে
সে বলল-_
: ভাই, আপনার আণ্তাটা বেচবেনঃ?
. হ্যা, আমার আণ্তাটা বেচব।
: তবে আমাকে দেন না ভাই আণ্তাটা । ন্যায্যমূল্য যা আসে পরে দিয়ে দেব।
. তা দিচ্ছি, তবে একটা শর্ত আছে।
: কি শর্ত ভাই?
. আমি যখন চাইব, তখন আমার আপ্তার ন্যায্যদাম সুদে-আসলে শোধ করে
দিতে হবে।
. তা দেব আর কি, একটা আগ্তার আর কতই-বা দাম হবে?
হাজের লোকদের উদ্দেশ্যে সে বলল : আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমি আমার
আগ্তাটা রায়হানের কাছে বিক্রি করছি। বিক্রির শর্ত এই যে, যখন আমি দাবি করব,
তখন রায়হান সুদে-আসলে আণ্তার ন্যায্য দাম পরিশোধ করবে।
হাজের সকলেই সাক্ষী হয়ে রইল।
লোকটি ছিল সুদখোর এবং হাড়কেঞ্চুন।
লেখক সম্পর্কে
আহমদ ছফা
জন্ম: ১৯৪৩ সাল
গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রী বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । গল্প. উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ।
সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ । বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি । একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের
স্থৃতিবিজড়িত কিয়োঙ্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।