একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
ছুটছিল আহমদ মুসা পূর্বমুখী প্রশস্ত করিডোর ধরে। তার পেছনে বুমেদীন বিল্লাহ।
দুজনের হাতেই দুটি ডেডলি কারবাইন। উদ্যত অবস্থায়। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যেত দুটো কারবাইনের নল দিয়েই ধুঁয়া বেরুচ্ছে। তাদের পেছনে করিডোরের এক চৌমাথা। চৌমাথার উপর পড়ে আছে ছয় সাতটি লাশ। ওরা ছুটে এসেছিল উত্তর ও দক্ষিণের করিডোরটার দিক থেকে আহমদ মুসাকে বাধা দেয়ার জন্যে। বন্দীখানার ভেতরে প্রহরীদের সাথে যে সংঘর্ষ হয়, তার গুলীর শব্দ তারা পেয়েছিল।
আহমদ মুসার বন্দীখানা থেকে বেরুতে চেয়েছিল নিশব্দেই। কিন্তু তা পারেনি। আবার গেটেও যে গোপন এ্যালার্ম ব্যবস্থা ছিল তা আহমদ মুসারা একবারও ভাবেনি। এ এলার্ম পেয়েই দুপাশ থেকে বাড়তি প্রহরীরা ছুটে এসেছিল গেটের দিকে। এ সবের ফলেই হাইম হাইকেলকে খোঁজার জন্যে আহমদ মুসারা বন্দীখানায় যে কাজটা নি:শব্দে সারতে চেয়েছিল তা আর হয়নি।
তাদেরকে বন্দীখানা থেকে ছয়টি লাশ মাড়িয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সব আট-ঘাট বেঁধে তাদের বন্দী করে রাখলেও তাতে একটা বড় ফসকা গিরা ছিল। তাদেরকে ক্লোরোফরম করেছিল তারা ঠিকই, কিন্তু আহমদ মুসা ও বুমেদীন বিল্লাহ তাদের নিশ্বাস বন্ধ করে রাখায় ক্লোরোফরম তাদের উপর কাজ করেনি। তারা সংজ্ঞা হারাবার ভান করে ওদের বোকা বানাতে পেরেছিল।
ওরা আহমদ মুসাদের পিছমোড়া করে বেঁধে মেঝেয় ফেলে রেখে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যেতেই আহমদ মুসা চোখ খুলেছিল। বুমেদীন বিল্লাহও। গেট আগলাবার ও বন্দীদের উপর নজর রাখার জন্য দুজন প্রহরী রাখা ও তাদের কড়া নির্দেশ দেয়ার বিষয়টাও তারা শুনে নেয়।
চোখ খুলেই মেঝের উপর উঠে বসে আহমদ মুসা। পিছমোড়া করে বাঁধা হাতের বাঁধন পরখ করার চেষ্টা করে বলে, ‘বিল্লাহ ওরা বিশেষ ধরনের রাবার রোপ দিয়ে বেঁধেছে। সম্ভবত এটা কোনভাবেই কাটা যাবে না।’
বুমেদীন বিল্লাহও উঠে বসেছিল। বলেছিল, ‘রাবারের বাঁধন খোলাও কঠিন ভাইয়া।’
আহমদ মুসা চোখ বন্ধ করে একটু ভেবেছিল। বলেছিল, ‘তবে বিল্লাহ রাবার দড়িতে যদি ইলাষ্টিসিটি থাকে, তাহলে কিন্তু একটা পথ বের করা যায়। বাঁধনটা যেভাবে হাতকে কামড়ে ধরেছে, তাতে রাবার দড়িতে ইলাষ্টিসিটি আছে বলেই মনে হচ্ছে। তোমারটা কেমন বিল্লাহ?’
‘ঠিক ভাইয়া, বাঁধনটা হাতে যেন ক্রমশই চেপে বসেছে।’ বলেছিল বুমেদীন বিল্লাহ।
খুশি হয় আহমদ মুসা। ঘরে ছিল ঘুট ঘুটে অন্ধকার। আহমদ মুসা বুমেদীন বিল্লাহর দিকে ঘুরে বসে বলেছিল, ‘আমি একটু চেষ্টা করি। দেখি তোমার বাঁধন কি বলে?’
‘কাজটা খুবই কঠিন ভাইয়া। পিছমোড়া করে বাঁধা হাত খুব একটা শক্তি খাটাতে পারবে না। কিন্তু বাঁধন দারুণ শক্ত বোঝাই যাচ্ছে।’ বলেছিল বুমেদীন বিল্লাহ।
‘তা ঠিক, বাঁধনটা খুবই শক্ত। কিন্তু বাঁধনের একটা সিংগল তারকে তুমি যদি আলগা করতে পার, তাহলে কিন্তু কাজ খুবই সহজ হয়ে যাবে।’ আহমদ মুসা বলেছিল।
কথা শেষ করেই আহমদ মুসা বুমেদীন বিল্লাহকে আবার বলে, ‘তোমার হাত এদিকে দাও।’
আহমদ মুসা তার দিকে পেছন ফিরেছিল।
আহমদ মুসা হাতের আঙুল দিয়ে বুমেদীন বিল্লাহর হাতের বাঁধন পরীক্ষা করে। অত্যন্ত শক্ত বাঁধন, রাবার ইলাষ্টিক হওয়ার কারণেই বাঁধন আরও কামড়ে ধরেছে হাতকে।
আহমদ মুসা অনেক চেষ্টার পর চিমটি দিয়ে ধরে একটা তারকে আলগা করে তাতে আঙুল ঢোকাতে পারল।
এ সময় বাইরে থেকে একজনের কণ্ঠ শোনা যায়। বলেছিল সে, ‘শালারা সংজ্ঞা হারায়নি। সাবধান। ঘর খোল। ওদের ঘুমিয়ে রাখতে হবে।’
কথাটা কানে যেতেই আহমদ মুসা বুঝে ফেলে সব। নিশ্চয় এঘরে সাউন্ড মনিটর যন্ত্র আছে, এমনকি টিভি ক্যামেরাও থাকতে পারে। তারা ঐভাবে কথা বলে ভুল করেছে।
ব্যাপারটা বুঝার সংগে সংগেই আহমদ মুসা বুমেদীন বিল্লাহর হাতের বাঁধনে ঢুকানো আঙুলটা বড়শির মত বাকা করে হাত দিয়ে জোরে টান দেবার উপায় না খুঁজে পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সামনের দিকে।
আছড়ে পড়ে আহমদ মুসা মেঝের উপর। মুখ খুলে যায় বিল্লাহর হাতের বাঁধনের। বুমেদীন বিল্লাহ দ্রুত বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে এগিয়ে যায় আহমদ মুসার দিকে।
‘তাড়াতাড়ি বিল্লাহ। ওরা দরজা খুলছে।’
বুমেদীন বিল্লাহ অন্ধকারে আহমদ মুসার হাত খুঁজে নিয়েছিল। পরীক্ষা করে দেখে হাতে কামড়ে বসে আছে শক্ত বাঁধন। অন্ধকারে হাতের বাঁধন হাতড়ে একটা তার খুঁজে নিয়ে তা বিচ্ছিন্ন করার মত অত সময় তখন নেই। কিন্তু হঠাৎ পেয়ে গেল গিরার মুখটা। গিরার বাইরে দুই তারের বাড়তি অংশে গিয়েই তার হাত পড়েছিল। সংগে সংগেই বিল্লাহ সেই বাড়তি অংশটুকু ডান হাতে ধরে জোরে টান দেয় এবং আলগা হয়ে উঠে আসা তারের ভেতর বাম হাতের চার আঙুল ঢুকিয়ে তারকে টেনে ধরে। সঙ্গে সঙ্গেই ডান হাতের চার আঙুলও বাম হাতেদর আঙুলের সাথে গিয়ে যোগ হয়। তারপর ‘রেডি ভাইয়া’ বলে তীব্র একটা হ্যাচকা টানে ছিড়ে ফেলল রাবারের দড়ি।
হাতের বাঁধন খুলে গিয়েছিল আহমদ মুসার। কিন্তু পায়ের বাঁধন তখনও বাকি। খুলে যায় এই সময় দরজা। উজ্জ্বল আলোয় ভরে যায় ঘর।